মোট পৃষ্ঠাদর্শন

রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কুর’আনে প্রযুক্তি [পর্ব- ২৬] :: আমাদের চারপাশে সবকিছুই কি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে?

আমাদের চারপাশে সবকিছুই কি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে?

বোধকরি একটু আশ্চর্য হচ্ছেন সব কিছু জোড়ায় জোড়ায় কি করে হতে পারে! প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি সত্য। আল- কুরআনে যখন এ সত্যটি মানববিশ্বের নিকট প্রকাশ করেছিল তখন এর নিগুঢ় তথ্যটি মানুষ অনুধাবন করতে সমর্থ হয়নি। কিন্তু বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পদাচারনায় মুখরিত। ১৪৩০ বছর হতে এখনো পর্যন্ত আরবী সাহিত্যিকগন নিদ্ধিধায় স্বীকার করে আসছেন কুরআনের মতো অতি উচ্চমানের কবিতা ও সাহিত্য রচনা মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় , সে সাথে তাল মিলিয়ে আমরা যদি তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় তাকাই মুসলিম হিসেবে গর্ব করে বলি বিজ্ঞান ১০ বা ৫০ বা ২০০ বছর আগে যা আবিষ্কার করেছে কুরআনে তার অনেক কিছুই ১৪৩০ বছর আগে মানুষের জন্য নিদর্শন স্বরুপ তুলে ধরেছে। আল্লাহপাক মানুষকে বিভিন্ন Signs বা কুরআনিক তথ্যের মাধ্যমে মানুষকে এক সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের দিকনির্দেশনা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ সমস্ত মহাবিশ্ব হটাৎ করে সৃষ্টি হয়নি নিঃসন্দেহে এ বিশাল সিষ্টেমের পেছনে কাজ করছে Master of Creation যাকে আমরা আল্লাহ্ বলি। আল্লাহপাক বলেন-

041.053 سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الآفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

”এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? ” (৪১ :৫৩) (অনুবাদ:- মাওলানামুহিউদ্দীন, উম্মুলকোরা, সৌদিআরব)

041.053 Soon will We show them our Signs in the (furthest) regions (of the earth), and in their own souls, until it becomes manifest to them that this is the Truth. Is it not enough that thy Lord doth witness all things? (Translated by- Asad)

Al-Qur'an, 041.053 (Fussilat [Explained in Detail])


১৯৩৩ সালের নোবেলজয়ী পদার্থ-বিজ্ঞানীর আবিষ্কার—

সুবিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞান জগতের ব্রিটিশ physicist পল ড্রেক যিনি মানবজাতির মধ্যে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন প্রতিটি পদার্থ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি। এ অতুলনীয় আবিষ্কারের পেছনে ছিল দীর্ঘ সময়ের গভীর তাত্বিক ও ব্যবহারিক গবেষনা, বিজ্ঞান দুনিয়ায় এ বিশাল অবদানের জন্য তাকে ১৯৩৩ সালে নোবেল পুরষ্কারে নির্বাচিত করা হয় । বিজ্ঞানের ভাষায় তারঁ আবিষ্কারের নামকরন করা হয়েছে-"parity" হিসেবে যা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে matter ও anti-matter –এর অস্তিত্বের জানান দেয়। Anti-matter প্রায় সময় matter এর বিপরীত কেরেক্টার হিসেবে কাজ করে থাকে। এর কয়েকটা বৈজ্ঞানিক উদাহরন হল- contrary to matter, anti-matter electrons are positive and protons negative ।

আরেকটু বিশ্লেষন-

প্রতিটি বস্তুর পরমাণুর বৈশিষ্ট্যের ঠিক উল্টো বৈশিষ্ট্য বহন করে তারই প্রতিবস্তু। অর্থাৎ উল্টো প্রতিটি প্রতিবস্তুর রয়েছে ধনাত্মক বিদ্যুৎবাহী ইলেকট্রন আর ঋণাত্মক বিদ্যুৎবাহী প্রোটন। এ বৈজ্ঞানিক সূত্রে বিষয়টি নিম্নরূপে বর্ণিত রয়েছেঃ

‘‘প্রতিটি কণারই (Particle) বিপরীত বিদ্যুৎবাহী প্রতিকণা (Anti-particle) বিদ্যমান রয়েছে-----আর অনিশ্চিত সম্পর্ক এটাই আমাদের বলে যে, জোড়ায় জোড়ায় বা যুগলের সৃষ্টি বা ধ্বংস শূণ্যে সকল সময় সকল স্থানে ঘটে থাকে।’’ Henning Genz, "Nothingness: The Science of Empty Space," 205,

বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবী বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উৎপাদন করে। বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রত্যেক খনিজ পদার্থই হয়ত ধনাত্মক কিংবা ঋনাত্মক আধার (charge) বিশিষ্ট অতি পারমাণবিক কণিকা দ্বারা গঠিত। খনিজ পদার্থের পাশাপাশি এমনকি পানিও যা পৃথিবী উৎপাদন করে, তাও বিপরীতধর্মী যৌগমূল দ্বারা গঠিত। পানি গঠিত হয় দুটি বিপরীতধর্মী উপাদনা দ্বারা। একটি ধনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট হাইড্রোজেন অনু এবং অপরটি ঋনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট অক্সিজেন অনু দুঠো মিলে সৃষ্টি হয় পানি যাকে বলা হয় H2O। অধিকন্তু পৃথিবী থেকে উৎপন্ন জোড়া জোড়া বস্ত্তসমূহ আরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে সেসব সমজাতীয় জোড়া, যা তাদের দৈহিক ও রাসায়নিক ধর্মের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। যেমন- ধাতু ও অধাতু। অনুরূপ বিপরীতধর্মী উপাদানবিশিষ্ট জোড়া যেমন, ধনাত্মক ও ঋনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট আয়ন থেকে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক বৈদ্যুতিক উপাদানসমূহ চৌম্বকীয় বিপরীতধর্মী জোড়া, যেমন- চুম্বকের উত্তরপ্রান্ত ও দক্ষিণপ্রান্ত, আকর্ষণ ও বিকর্ষণ শক্তি, তেমনিভাবে কেন্দ্রনির্গত শক্তির মাধ্যমে মধ্যাকর্ষণ ভারসাম্য ইত্যাদি। "Wanna C A Miracle: Quran: The Living Miracle," The Revival 5, Issue 2, www.therevival.co.uk/Revival_issue/vol5_iss2_quran_miracle.htm

 মানবিক জোড়ার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে- পুরুষ ও মহিলার লিঙ্গভেদ, পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রকাশক গুণ, যেমন- নিষ্ঠুরতা ও পরদুঃখ কাতরতা, সাহস ও ভয়, উদারতা ও কৃপণতা ইত্যাদি।উদ্ভিদের ক্ষেত্রে আমরা জোড়ার অস্তিত্ব দেখতে পাই ফলের ক্ষেত্রেও জোড়া রয়েছে পুরুষ ও নারী ফল।(ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে পরবর্তী পর্বে।) ইলেকট্রিসিটির মধ্যেও রয়েছে Negative & positive flow.অতঃপর যে কেউ সহজে উপসংহারে আসতে পারে যে, জোড়ার রহস্য পুরুষ ও মহিলা কিংবা বিপরীত বৈদ্যুতিক উপাদান ও বিপরীতধর্মী গুণ মানব জাতিসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক বিষয় ও শক্তিসমূহের মধ্যে বিদ্যমান। এ কথা উপরোক্ত কুরআনি আয়াতে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আসুন এবার কুরআনের বক্তব্য শুনি-

036.036 سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ

036.036 Glory to Allah, Who created in pairs all things that the earth produces, as well as their own (human) kind and (other) things of which they have no knowledge.



Al-Qur'an, 036.036 (Ya-Seen [Ya-Seen]) (Translated by- Asad)

 পবিত্র মহান তিনি, যিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে।(কোরআন, ৩৬ : ৩৬)(অনুবাদ:- মাওলানামুহিউদ্দীন, উম্মুলকোরা, সৌদিআরব)



013.003 وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الأرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

013.003 And it is He who spread out the earth, and set thereon mountains standing firm and (flowing) rivers: and fruit of every kind He made in pairs, two and two: He draweth the night as a veil over the Day. Behold, verily in these things there are signs for those who consider! (Translated by- Asad)



Al-Qur'an, 013.003 (Ar-Rad [The Thunder])


031.010 خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقَى فِي الأرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ كَرِيمٍ

031.010 He created the heavens without any pillars that ye can see; He set on the earth mountains standing firm, lest it should shake with you; and He scattered through it beasts of all kinds. We send down rain from the sky, and produce on the earth every kind of noble creature, in pairs. (Translated by- Asad)



Al-Qur'an, 031.010 (Luqman [Luqman])

 020.053 الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأرْضَ مَهْدًا وَسَلَكَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلا وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْ نَبَاتٍ شَتَّى

020.053 "He Who has, made for you the earth like a carpet spread out; has enabled you to go about therein by roads (and channels); and has sent down water from the sky." With it have We produced diverse pairs of plants each separate from the others. (Translated by- Asad)

 Al-Qur'an, 020.053 (Ta-Ha [Mystic letters Ta-Ha])

 এখন আমরা নিজেদেরকে একবার প্রশ্ন করি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত একজন মানুষ যিনি না লিখতে পারতেন, না পড়তে। এমনকি যিনি নিজের নামটি পর্যন্ত স্বাক্ষর করতে পারতেন না, তিনি কি কুরআন মাজিদের গ্রন্থকার হতে পারেন? না তা এমন একটি গ্রন্থ যা সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যাযকাল্লাহ....