মোট পৃষ্ঠাদর্শন

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কুর’আনে প্রযুক্তি [পর্ব- ১১] :: পেরেক সদৃশ্য- পর্বতমালা

আসসালামুআলাইকুম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সবাইকে :)

কুর’আনে প্রযুক্তি [পর্ব- ১১] :: পেরেক সদৃশ্য- পর্বতমালা

ভূতত্ব গবেষনার জন্য প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ‘The earth’ নামক বইটি ব্যবহার করা হয়। ডাঃ ফ্রাঙ্ক প্রেস-আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উপদেশমন্ডলীর মধ্যে অন্যতম তিনি বলেন-পর্বতের অত্যন্ত গভীর শিকর রয়েছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে। সত্যিকার অর্থে পর্বত একটি ভাষমান বরফের অথবা খুঁটির মতো যার ৯০% থাকে পানির নীচে ও ১০% থাকে উপরে।

পর্বতমালার একটি গুর
ত্বপূর্ণ ভৌ․গলিক কার্যাবলীর প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পবিত্র কোরআনের নিম্নের আয়াতঃ –

114.001 قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

“আর আমি জমিনের উপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদের নিয়ে জমিন ঝুঁকে না পড়ে ; এবং আমি সেখানে প্রশস্ত প্রশস্ত রাস্তা সৃষ্টি করেছি যেন তারা গন্তব্য
স্থলে পৌঁছাতে পারে।”

Al-Qur'an, 114.001 (An-Nas [Mankind])

ভূপৃষ্ঠের কম্পন প্রতিরোধে পর্বতমালার যে ভূমিকা রয়েছে সেটি আমরা আয়াতটিতে খেয়াল করেছি। আল-কোরআন যে সময়ে নাযিল হয়, তখন কেউ এ ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত ছিল না।

ভূতত্ববিদগনের তথ্যানুসারে, যে ভারী ভারী বড় প্লেটগুলো পৃথিবীর উপরের শক্ত স্তর সৃষ্টি করে, সেগুলোর নড়াচড়া আর সংঘর্ষের ফলেই উৎপত্তি ঘটে পর্বতমালাসমূহের। দুটি প্লেট যখন পরস্পর ধাক্কা খায় তখন শক্তিশালী প্লেটটি অন্য প্লেটের নীচে গড়িয়ে চলে যায়, তখন উপরের প্লেটটি বেঁকে গিয়ে পর্বত ও উঁচু উচুঁ জায়গার জন্ম দেয়। নিম্নের স্তরটি ভূমির নীচে অগ্রসর হয়ে ভেতরের দিকে এক গভীর প্রসারণের জন্ম দেয়। এর মানে পর্বতের রয়েছে দুটো অংশ, উপরে সবার জন্য দর্শনযোগ্য একটি অংশ যেমন থাকে, তেমনি নীচের দিকে গভীরে এর সমপরিমাণ বিস্তৃতি রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে আধুনিক ভূ-বিজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্যসমূহের মাধ্যমে কেবলি সেদিন এ বিষয়টি প্রকাশ পেল।

পর্বতসমূহ ভূমির উপরে ও নিম্নদেশে বিস্তৃত হয়ে পেরেকের ন্যায় ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন প্লেটকে দৃঢ়ভাবে আটকে ধরে রাখে। ভূ-পৃষ্ঠের উপরের অংশ বা ক্রাস্ট অবিরাম গতিশীল প্লেট নিয়ে গঠিত। পর্বতগুলোর দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যটিই ভূপৃষ্ঠের উপরের স্তরকে ধরে রাখে ,কম্পন প্রতিরোধ করে অনেকাংশে। অথচ এই ক্রাস্টের রয়েছে গতিশীল গঠন। বিজ্ঞানের বইগুলোতে পাহাড়ের গঠন বর্ণিত হয়েছে নিম্নরূপেঃ

মহাদেশগুলোর যে অঞ্চলসমূহ পু রু, যেখানে সারি সারি পর্বতমালা রয়েছে, সেস্থানে ভূ-পৃষ্ঠের শক্তস্তর বা ক্রাস্ট ম্যান্টলের ভেতরে গভীরে ঢুকে যায়।

একটি আয়াতে পর্বতমালার এই ভূমিকাকে ‘‘পেরেকের’’ ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছেঃ

078.006 أَلَمْ نَجْعَلِ الأرْضَ مِهَادًا

078.007 وَالْجِبَالَ أَوْتَادًا

আমি কি জমিনকে করিনি বিছানা সদৃশ ?এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ ?

Al-Qur'an, 078.006-007 (an-Naba [The Tidings, The Announcement])

অন্য কথায় পর্বতমালাগুলো ভূপৃষ্ঠের উপরে ও নীচে গভীরে বর্ধিত হয়ে প্লেটগুলোকে তাদেরই সন্ধি বা মিলনস্থলকে স্থিরভাবে ধরে রাখে। এভাবে তারা পৃথিবীর উপরের স্তর বা ক্রাস্টকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে আর ম্যাগমা স্তরের উপরে কিংবা প্লেটগুলোর মাঝে ক্রাস্ট এর ভেসে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। সংক্ষেপে আমরা পর্বতমালাকে লৌহ পেরেকের সঙ্গে তুলনা করতে পারি যেগুলো কিনা কাঠের বিভিন্ন টুকরাকে

একত্রে আটকে রাখে। পর্বতমালার এরূপ সেটে বা এটে ধরার কাজটি বিজ্ঞান সাহিত্যে ISOSTACY শব্দ দ্বারা বর্ণিত রয়েছে। ISOSTACY বলতে যা বুঝায় তা নিম্নরূপঃ

ISOSTACY মাধ্যাকর্ষনজনিত চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের নীচে সহজে বক্র হয় এমন পাথর জাতীয় জিনিষ দ্বারা পৃথিবীর ক্রাস্ট বা উপরিস্তরের সাধারণ ভারসাম্য বজায় থাকে। পর্বতমালার এই গুরত্বপূর্ণ কাজটি বহু শতাব্দী পূর্বে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছিল যা কিনা আজ আধুনিক ভূবিজ্ঞানে ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা উন্মোচিত হয়েছে - এটি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে সর্বো‪চ বিজ্ঞতারই উদাহরণ।

আর আমি জমিনের উপর সুদৃশ পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদেরকে নিয়ে জমিন ঝুঁকে নাপড়ে ; এবং আমি সেখানে প্রশস্ত প্রশস্ত রাস্তা সৃষ্টি করেছি যেন তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। (কোরআন, ২১: ৩১)

পৃথিবীতে এমন কোন পাহাড় নেই যার ভূ পৃষ্টের অভ্যন্তরে শিকড় নেই। বরং পাহাড়ের দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে প্রায় তার সাড়ে চারগুণ লম্বা মাটির অভ্যন্তরে রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সেগুলো পেরেকের ন্যায়। তাঁবু ঠিক রাখার জন্য বালির মধ্যে যেভাবে পেরেক ব্যবহার হয় ঠিক তেমনি ভাবে পৃথিবীকে ঠিক ও স্থিরতা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে পর্বতমালা।

প্রফেসর শিয়াবিতা জাপানি ঐ বিজ্ঞানী চলমান বিশ্বের ভূ-তত্ত্ববিদদের অন্যতম। তিনি কোন ধর্মে বিশ্বাস করতেন না। সকল ধর্মের প্রতিই বিভ্রান্তিমূলক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে বর্তমানে বিজ্ঞানময় কুরআনের সত্যতাকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।

কয়েকজন মুসলিম মনীষী তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বললেন, বিশ্বের কোন ধর্ম বিষয়ক পন্ডিতদের মুখ খোলা উচিত নয়। কেননা যখন আপনারা কথা বলেন, তখন মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন এবং বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ সংঘর্ষ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্য বিশেষত ধার্মিক পন্ডিতেরাই দায়ী। এর প্রতি উত্তরে মুসলিম মনীষীগণ বললেন, তাহলে ন্যাটো রাষ্ট্র সংঘ এবং ওয়ারম চুক্তি বা যুদ্ধ প্রতিযোগিতা এত বিপুল পরিমাণে নিউক্লিয়ার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রাগার নির্মাণ করেছে, এটার জন্যেও কি ধার্মিক পন্ডিতেরা দায়ী? প্রতি উত্তরে তিনি নীরব। তখন বলা হলো সকল ধর্মের ব্যাপারে আপনি কটূক্তি করেন, তাতে কোন আপত্তি নেই। তবে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যেহেতু আপনি কম জ্ঞানের অধিকারী, সেহেতু এ ব্যাপারে কোন কঠিন মন্তব্য না করাই উত্তম। বরং আপনার নিকট জোর আবেদন জানাচ্ছি, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আপনি একটু জানুন ও গবেষণা করুন। অতপর তার সামনে তার গবেষণা বিষয়ক একাধিক প্রশ্ন উপস্থাপন করা হলো।

প্রশ্ন: আচ্ছা জনাব বলুনতো, পাহাড়গুলো কি দৃঢ়ভাবে মাটির সাথে স্থাপিত? নাকি ভাসমান? মহা দেশীয় ও মহাসাগরীয় পাহাড়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কি?

আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, মহা দেশীয় পাহাড় মূলত গঠিত হয় গাদ দ্বারা। পক্ষান্তরে মহাসাগরীয় পাহাড় গঠিত হয় আগ্নেয়গিরি সম্বন্ধীয় শিলা দ্বারা। আর মহা দেশীয় পাহাড় সংকোচন শক্তির দ্বারা গঠিত হয়। কিন্তু মহাসাগরীয় পাহাড় গঠিত হয় প্রসারণ শক্তি দ্বারা। আবার মহা দেশীয় পাহাড় হালকা উপাদান দ্বারা গঠিত। তবে মহাসাগরীয় পাহাড়ের গঠন হালকা বলেই এই পাহাড়গুলো হালকা নয়। কিন্তু ইহা গরম। আর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, উভয় পাহাড়ই ভার বহন করার কাজ করে চলছে। অতএব আল­াহর কুরআনে বলা হয়েছে যে, আমি কি পাহাড়কে পেরেক স্বরূপ স্থাপন করিনি? সুতরাং উভয় পাহাড়ই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার কাজ করে চলছে। এ বিষয়টিতে আপনার মতামত কি?

এতদশ্রবণে প্রফেসর শিয়াবিতা ভূমিতে অবস্থিত এবং সমুদ্র বক্ষে দন্ডায়মান সকল পাহাড়ের বর্ণনা দিলেন। আর তিনি এও বললেন যে, সকল পাহাড়ই পেরেকের আকৃতি বিশিষ্ট। যেন ফুটো জিনিসকে আটকে রাখার কাজ করছে। এবং ভূপৃষ্ঠ ও সাগরের ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে। অথচ এ মর্মে আল-কুরআন সু-স্পষ্টভাবে কথা বলেছে অনেক পূর্বেই, আর তা হলো আমি কি পাহাড়কে পেরেক স্বরূপ স্থাপন করিনি? তিনি অবাক হলেন, আজ থেকে ১৪০০ শত বৎসর পূর্বে ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে যখন মানুষের ধারণা ছিল খুবই দুর্বল। এত যান্ত্রিক উপাদান যখন ছিল না। বই পুস্তক ছিল না। আধুনিক ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানীদের লিখিত কোন দলিলও ছিল না, আবিষ্কার ছিল না, কি করে তখন মুহাম্মদ (সা) নিরক্ষর মানুষ হয়ে এই তাত্ত্বিক তথ্য প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা আজকে তিলে তিলে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সমগ্র বিজ্ঞান যাকে শাশ্বত বলে মেনে নিচ্ছে। নিশ্চয়ই ইহা কোন মানবীয় জ্ঞান নয়। বরং কোন অসীম ও ঐশী শক্তির পক্ষ থেকে সমাগত হয়েছে। নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ (সা)-এর প্রচারিত জ্ঞান চিরন্তন সত্য। এই বলেই তিনি আল-কুরআনের ব্যাপারে মন্তব্য করলেন। আধুনিক বিজ্ঞানের তথ্য-সমৃদ্ধ গ্রন্থ আল-কুরআন চিরন্তন সত্য।



http://www.facebook.com/pages/Al-Quran-Modern-Science/140069416050931

http://muslim.zohosites.com/ http://www.quranic-science.blogspot.com/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যাযকাল্লাহ....