মোট পৃষ্ঠাদর্শন

বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩

কুর’আনে প্রযুক্তি [পর্ব-১৯] :: মাধ্যাকর্ষণ শক্তির রহস্যটা কি?

আসসালামুআলাইকুম শুভেচ্ছা সবাইকে :) ।সবাই ভাল আছেন আল্লাহর রহমতে আশা করি।

কুর’আনে প্রযুক্তি [পর্ব-১৯] :: মাধ্যাকর্ষণ শক্তির রহস্যটা কি?

ঐতিহাসিক পটভূমি-
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি রয়েছে সম্পর্কে কমবেশি আমরা সকলে অবগত। যা স্কুলে গৎবাধাঁ একটা গল্পের মতো – নিউটন বাবাজী কোন এক কারনে আপেল গাছের নিচে বসে ধ্যান করছিলেন হটাৎ টুপ করে উপর থেকে আপেল ঝড়ে পড়লো, সে সাথে উনি ধ্যান ভঙ্গ করে ভাবতে বসে গেলেন ফলটি উপরে কেন উঠে গেলনা? নিচে পড়ে গেল ব্যাপারটা কি? সাধারন মানুষ হলে তো সেটা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করতো না কিন্তু নিউটন বলে কথা, আমাদের মতো উনার মগজ হাটুঁতে না …তো সর্বশেষে উনি যোগ-বিয়োগ করে একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে পৃথিবীর একটা নিম্নমুখী বল রয়েছে , পরবর্তীতে সেটা মধ্যাকর্ষন শক্তি নামে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই জানিনা কি কারনে এমনটি ঘটে উপর থেকে কোন বস্তু ছেড়ে দিলে কেন নিচে নেমে আসে সেটা উপরে যায়না কেন? প্রত্যেকেই জানতে চায় কোন জিনিসে আকর্ষণ সৃষ্টি করে? এই আকর্ষণের কারণ কি? মূল কোথায়?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-
Geologist- গন একটি গবেষনায় প্রমান করেছেন যে পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে অত্যধিক ভারী বস্তুতে পরিপূর্ন যেমন নিকেল, লৌহ, হীরা আর অনেক ধরনের যৌগিক ওজনদার বস্তু। গবেষণার মাধ্যমে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন যে আকর্ষণ বল অতীব শক্তিশালী হবার অন্যতম কারন হলো পৃথীবির আভ্যন্তরীক বস্তুগুলো ওজন । ওজন যত ভারী হবে আর্কষন ক্ষমতা ততোধিক শক্তিশালী ও প্রবলতর হবে। তাদের গবেষনালব্ধ ফলাফল আমাদের বলে- আমরা যত মাটির নিচে নামছি ওজন তত বাড়ছে, বর্তমানে অতি কঠিন সব টেকনোলজী আমাদের নাগালে দিন দিন সহজলভ্য ও খোলসা হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীগন পৃথিবীর গভীরে (বলা যায় মাঝামাঝি পযার্য়ে ) এক ধরনের ভারী তরল পদার্থ পেয়েছেন যা সেখানে অবিরত পাক খেয়ে স্থান পরিবর্তন করে চলছে। অভ্যন্তরে তার এই চলাচলটা একটা পথে পরিণত হয়েছে, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় Magnetic running root অথবা চুম্বকপথ (মাটির উপরস্থিত হতে প্রায় কয়েক হাজার নিম্নে যার বসবাস) ।

সমস্ত প্রশংসার দাবীদার- সৃষ্টিকরতা যিনি অত্যাশ্চর্য সিষ্টেম সৃষ্টি করেছেন-
আল্লাহপাক এ Magnetic- কে এমন পর্যায়ে ক্ষমতা দিয়েছেন যে আমাদের বায়ুমন্ডলের উপরে Van Aleen Belt (আগে আলোচনা হয়েছে)- কে কয়েক হাজার মাইল দুর হতে কন্ট্রোল করে । অথাৎ মাটির সুগভীর নীচ হতে আকাশের বহু উপরে (পৃথিবীর চারিদিক) অতীব শক্তিশালী এক চুম্বক কক্ষেত্রে সৃষ্টি করে। যেমন ঠিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রক্ষাকারী ঢালের মতো যা ব্যতীত একজন যোদ্ধা যেমন বর্ম বা ঢাল বা protection shield ব্যতিত অসহায় । ঠিক আমাদের এ পৃথিবী অভ্যন্তরভাগ হতে সৃষ্টি চুম্বক ক্ষেত্রের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল কারন এ protection shield দিয়ে সে মহাশূন্য হতে আসা বিভিন্ন ভয়ঙ্কর ও অচিন্তনীয় যা আমরা বেশিরভাগ মানুষ ভাবতে পারিনা বা জানিনা এমন আক্রমন প্রতিহত করে চলছে।

হাতি ও চিপস-
Ozon Layer- কর্ম পদ্বতি কিন্তু আভ্যন্তরীন বলয়েরই এক অনুরুপ , এর ক্ষমতা আমরা বায়ুমন্ডলের শেষ সীমানায় পর্যন্ত দেখতে পাই (প্রায় 50-100 কিমি পর্যন্ত)। একটা হাতিকে যদি চিপসের উপর হাটতে বলা হয় তাহলে চিপসের যে করুন পরিনতি হবে ঠিক তেমনি Magnetic root অথবা চুম্বকপথ ছাড়া আমাদের অবস্থা হবে আরো শোচনীয় । উদাহরন স্বরুপ বলা যায় আমরা অনেকে সৌর ঝড়ের নাম শুনেছি, আসলে সৌর ঝড়ের প্রভাব কি পৃথিবীর মতো সাধারন কোন ঝড়ের ন্যায় ?….না তা নয় এমনটা ভাবলে ভূল হবে। একটা ছোটখাট সৌর ঝড় যদি আমাদের পৃথিবীর উপর দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বয়ে যায় আমাদের এ সাধের পৃথিবী হবে স্রেফ উনুনের জলন্ত কয়লার মতো। একটা মানুষ তো দুরের কথা ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকবে কিনা Geologist- গন সন্দেহ পোষন করেন। প্রশ্ন হলো যে Magnetic root পৃথীবীর অভ্যন্তরে থেকেও আকাশের সুউচ্চ সীমানায় যার চুম্বকের শক্তিশালী এক বলয় কাজ করে যাচ্ছে অদৃশ্য কারো আদেশে? কেউ যেন এই perfect সিষ্টেমের কলকাঠি নাড়ছে। আর এই হচ্ছে ম্যাগ্নেটিস যা প্রত্যেক বস্ত্তকে টেনে নেয় বা আকর্ষণ করে। তারা আরও বর্ণনা করেছে যে এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকার কারণেই মানুষ পৃথিবীর উপর চলাফেরা করতে পারছে, বৃষ্টির পানি নিচে মাটিতে আসে, গাছের ফল জমিনে পড়ে, বাতাস পৃথিবীর সাথে লেগে থাকে। শুধু তাই নয় পৃথিবী হতে কোন বস্ত্তর দুরত্ব যতই বাড়তে থাকে ততই তার ওজন কমতে থাকে। আর যদি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা না করতেন তবে পৃথিবীর সব কিছু মহাশূন্যে হারিয়ে যেত, তা আর পাওয়া যেত না।

কুরআন কি আয়াত নির্দেশিত করছে?-
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
إذا زلزة الأرض زلزالها وأخرجة الأرض أثقالها ( سورة الزلزلة
( 1 ) যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে,
( 2 ) যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।
( 3 ) এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ?
(সূরা যিলযাল ১-৩) (অনুবাদ:- মাওলানামুহিউদ্দীন, উম্মুলকোরা, সৌদিআরব)
এই আয়াত দুইটির ব্যাখ্যায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সেমিনারে মুসলিমদের সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন আমেরিকার অধিবাসী John Satiklaz। তিনি বলেন:
পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভারী বোঝা রয়েছে। আর এই বোঝাগুলো অনতিবিলম্বে বেরিয়ে আসবে ও মধ্যাকর্ষন শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যখন সেগুলো বের হয়ে আসবে তখন অবস্থা কি হবে? আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলছেন:
وإذا الأرض مدت وألقت ما فيها وتخلت (سورة الإنشقاق
( ৩ ) এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।
( ৪ ) এবং পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে শুন্যগর্ভ হয়ে যাবে।
(সূরা ইনসিকাক ৩-৪) (অনুবাদ:- মাওলানামুহিউদ্দীন, উম্মুলকোরা, সৌদিআরব)

ডা. হেমায়েত তাঁর গুরুত্বপূর্ন সমালোচনা-
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থাকবে না যখন গর্ভস্থিত সবকিছু বের হয়ে যাবে , তখন আর তার এই মহা বিশ্বের সুন্দর আইন শৃঙ্খলা ও নিয়ম নীতি আর থাকবে না। এ সব কিছুই হবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে। ডা. হেমায়েত স্বীয় কিতাবে আরও বর্ণনা করেছেন: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টান না থাকলে অথবা কম হলে জলীয় বাষ্প উপরের দিকে চলেই যেত। আবার উপরে ঠান্ডা বাতাস জলীয় বাষ্পকে ঘনীভূত করতে না পারলে জলকণা তৈরি হত না। ফলে বৃষ্টিও হত না। তাহলে একদিন পৃথিবীর সব পানিই বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াত। আর ফিরে আসত না। ফলে পৃথিবীতে কোন পানিই খুঁজে পাওয়া যেত না। যার ফলে নিঃশেষ হয়ে যেত জীবনের অস্তিত্ব। তিনি আরও বলেন: পৃথিবী যদি চাঁদের মত ছোট অর্থাৎ বর্তমান আয়তনের চারভাগের একভাগ হত তবে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হত বর্তমানে যা আছে তার ৬ ভাগের ১ ভাগ। তাহলে সূর্যের তাপে পানি বাষ্প হয়ে উপরের দিকে চলে গেলে আর ফিরে আসত না কোনদিন। মাধ্যাকর্ষণ কম হওয়ার কারণে চলে যেত তো চলেই যেত। ফলে দ্রুত শেষ হয়ে যেত পৃথিবীর সমুদয় পানি। আল্লাহ বলেন-
023.018 وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الأرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
এবং আমি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; অতঃপর আমি উহা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি; আমি উহাকে অপসারিত করিতেও সক্ষম।’ (সূরা মুমিনূন ২৩: আয়াত ১৮)

চাঁদ সবসময় পৃথিবীর দিকে একদিক মুখ করে ঘুরে। চাঁদের মত পৃথিবীও যদি সূর্যের দিকে একদিকে হত তাহলে সেই দিক হতো তীব্র শীত, যার কারণে পানি বরফ হয়ে যেত আর অন্যদিকে প্রখর গরমের জন্য পানি বাষ্পীয় অবস্থায় বিদ্যমান থাকত।অতি গরম ও অতি শীত কোন অবস্থায়ই পানি পাওয়া সম্ভব হত না।
পৃথিবী যদি সূর্যের সমান বড় হত তবে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হত বর্তমানের ১৫০ গুণ। যার কারণে বায়ুমন্ডলের উচ্চতা ৪ মাইলের চেয়েও কমে যেত। তাহলে পানি আর বাষ্পীভবন হত না। সারা পৃথিবী ডুবে যেত পানিতে।
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যদি বর্তমানের দ্বিগুণ হত তাহলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর তাপ কমে গিয়ে দাঁড়াত বর্তমানের ৪ ভাগের ১ ভাগে। তদুপরি কক্ষপথ বৃদ্ধির কারণেও শীতকালের পরিমাণ হত বর্তমানের চার গুণ। কাজেই সারা পৃথিবীর পানি বরফে পরিণত হয়ে যেত। এমনকি গ্রীষ্মকালেও মুক্ত পানি পাওয়া যেত না। তীব্র শীত ও মুক্ত পানির অভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত অতি সহজেই।
আপনাকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে পোষ্টটি পড়ার জন্য।
একটি উদ্যেগ আহবান:
আসুননা আমরা সমম্বিতভাবে উদ্বেগ নিয়ে বাংলা সহিহ হাদিসের Unicode Software সৃষ্টি করি। ইনশাআল্লাহ প্রথমে আমরা সহিহ বুখারীর হাদিস নিয়ে কাজ শুরু করবো। chm ফরমেটে, ইনষ্টলের কোন ঝামেলা নেই। 1 click – এ উইন্ডো ওপেন হবে এবং সহজেই ডাটা কপি,পেষ্ট করা যাবে, এছাড়াও রয়েছে পাওয়ারফূল সার্চ ও কিওয়ার্ড অপশন। যেহেতু প্রায় 5000 হাদিস নিয়ে সহিহ বুখারী এর জন্য অবশ্যই টিম ওর্কের প্রয়োজন যার নামকরন করা হয়েছে সংক্ষেপে DBHT-(Degital Bangla Hadith team)। সম্মানিত ভাই/ বোন যারা সদস্য হতে চান এ টিমের কর্মপদ্বতি হবে নিম্নরুপ-
1)যারা অংশ নেবেন Software Contribution- এ তাদের নাম ও প্রোফাইল লিংক থাকবে।
2) প্রত্যেককে pdf formate-এ হাদিস দেয়া হবে। সদস্য হতে হলে কমপক্ষে 100 হাদিসের ডাটা এন্ট্রি করে নিম্নলিখিত এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে হবে।(সময় খুব বেশি হলে মাত্র তিন ঘন্টার একটা কাজ)
3) পিডিএফ ফরম্যাটে হাদিস দেয়া হবে আপনি MS Word-এ টাইপ করে মেইলে এটাচ করে পাঠিয়ে দেবেন, আপনার প্রোফাইল লিংক যদি দেন ভাল হয়।
4) আপনার হাদিস পাবার পর সেটা আপডেট করে ফেসবুকে লিংক দেয়া হবে যেখান থেকে আপনি ডাউনলোড করে কাজের অগ্রগতি দেখতে পাবেন।
আশা করি আপনারা এ মহান কাজে অংশ গ্রহন করবেন।কমপক্ষে 100 হাদিসের ডাটা এন্ট্রি করে DBHT সদস্য হয়ে যান। পিডিএফ হাদিসের জন্য যোগাযোগ করুন।


বিঃদ্রঃ:- কারও কাছে হাদিস সফট কপি থাকলে অনুরোধ থাকবে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য। এটি কোন কর্মাশিয়াল উদ্যেগ নয়। শধুমাত্র ভলান্টিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে DBHT-এর হাদিসের Digital interface তৈরি করার একটা যৌথ প্রচেষ্টা। ধন্যবাদ। যোগাযোগ করুন।
শাহরিয়ার আজম
B.Sc.IT (S. M University,India),/ M.A & Ph.D (Paris University, France), DEW, Belgium
মেইল এড্রেস- rub_sanjida@yahoo.com
Mob-01714351057
DBHT-(Degital Bangla Hadith team)
http://www.facebook.com/pages/DBHT/603417713008497
http://www.facebook.com/pages/Al-Quran-Modern-Science/140069416050931
http://muslim.zohosites.com/ http://www.quranic-science.blogspot.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যাযকাল্লাহ....